Wednesday, 9 September 2015

বড় ছেলে-মেয়ে

বাড়ির বড় ছেলে বা মেয়েদের অনেক কিছু বুঝে চলতে হয়, মানিয়ে নেয়ার অস্বাভাবিক ক্ষমতা থাকে তাদের...
নিজের পছন্দ ভুলে মুরগীর রান টা ছোট ভাই বা বোনের প্লেটে তুলে দিতে বেশী তৃপ্তি লাগে। ঈদ এর আগে খরচের হিসাব করতে গিয়ে যখন বাবার কপালে ভাঁজ পড়ে তার কাঁধে হাসি মুখে হাত রেখে বলতে হয় “ধুর ! আমার জন্য কিছু কেনা লাগবে না, ছোটকে নতুন কিছু কিনে দিও”
কোন আফসোস লাগে না তাতে। বরং বুকের ভেতর অন্য রকম প্রশান্তি লাগে।
তবুও বন্ধুদের হাতে দামী মোবাইল ফোন, পায়ের

চকচকে স্নিকার, শীতের নতুন নতুন ব্লেজার দেখে কিছুটা আফসোস কি আসলেই হয়না ?
হয়তো হয়...
অন্যদের হাতে সুন্দর হাতঘড়ি দেখে একটা ঘড়ির শখ হয়ত ঠিকই জাগে কিন্তু পরক্ষনেই "বুঝ" নামের কিছু একটা এসে মনকে বোঝায় “আরে পাগল ! মোবাইলেই তো দিব্যি সময় দেখতে পারছি, হাতঘড়ি দিয়ে কী হবে!”
এই "বুঝ" জিনিষটা মনের অসুখের খুব বড় ওষুধ। আফসোস গুলোকে সে উড়িয়ে দেয় আকাশে।
তাইতো একটা ব্যাগ দিয়েই কলেজ-ভার্সিটি কাটিয়ে দেয়ার আফসোস এর চেয়ে ছোটর কাঁধে নতুন একটা ব্যাগ দেখতে পারার সুখ অন্যরকম লাগে...বাবার জন্য Ray ban এর একটা সানগ্লাস কেনার টাকা জমাতে ভালো লাগে, মায়ের হাতে একটা মোবাইল ফোন তুলে দিয়ে বলতে ভালো লাগে “মা, এই নাও তোমার ফোন...এখন থেকে যখন খুশি আমাকে কল দিতে পারবা...বাবাকে আর জ্বালাতে হবে না”
বাবা-মাও জানে তাদের পাগল বা পাগলীটা কতটা ছাড় দিয়েছে জীবনে। মা হয়তো রাতের বেলা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেও ফেলে, “তোর অনেক কষ্ট হয়ে যায়, না রে ?”
উত্তরে নিজেকে বুঝ দেয়ার মত মাকেও নিশ্চিন্ত করতে মুখ থেকে বের হয়ে আসে “ মা, কী যে বলনা তুমি ! দিব্যি ভালোমতই চলছি আমি...”
বুঝ দিতে দিতে একটা সময় নিজেকে আর সন্তান মনে হয় না... বাবা-মা ছোট ভাই বোনগুলোকেই আপন বাচ্চা মনে হয়। ওদের সুখেই নিজের সুখ মনে হয়, ওদের হাসিতেই নিজের মুখে হাসি ফোটে...
কিছু সুখ অতুলনীয়. যারা সে সুখ পেয়েছে, নিজের অনেক শখ কে “বুঝ” দিয়ে সরিয়ে রেখে সন্তান থেকে হয়ে উঠেছে বাবার মত...সৃষ্টিকর্তা তাদের বাঁচিয়ে রাখুক, তাদের বেঁচে থাকা জরুরী...
অনেক অপেক্ষার পর সংসারের সুখের গল্পটা লেখা হোক তাদের হাতেই...

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...