Monday, 12 October 2015

" প্রতিশোধপ্রবণ এক ছেলের গল্প "

লোকাল বাসে জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে প্রিন্স । তার মন অনেক ভালো । আজকে আরেকটা মেয়েকে ছেঁকা দিতে পেরেছে । এই নিয়ে ৯ জন হল । মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করে কয়েকদিন পর তাকে ছেঁকা দেয়ার মাঝে পৈশাচিক আনন্দ খুজে পায় সে । কিন্তু আজ থেকে ৫ বছর আগেও সে এমন ছিল না ।
একটা মেয়েকে অনেক বেশী ভালোবাসতো সে । তাকে নিয়ে পুরোটা জীবন থাকার স্বপ্ন দেখেছিল সে । কিন্তু মেয়েটি তার সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল ।ওর জীবন এলোমেলো করে দিয়েছিলো।ওর স্বপ্নের মৃত্যু ঘটিয়েছিলো।সেই থেকে মেয়েদের প্রতি তার অনেক ঘৃণা ।

সায়মা ফোন হাতে নিয়ে অঝোরে কাঁদছে আর বারবার প্রিন্সের নাম্বারে ডায়াল করছে । প্রায় আশিবার ডায়াল করার পর প্রিন্স ফোন ধরল । -প্লীজ প্রিন্স, প্লীজ, তুমি এমন কর না । হাউমাউ করে কেঁদে বলল সায়মা ।

-আমি কেমন করছি ? অবাক হওয়ার ভান করলো প্রিন্স । 
-ফোন ধরছ না আমার । 
-তোমার সাথে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে । আমি কেন তোমার ফোন ধরবো ? 
-প্লীজ ,একটু বুঝার চেষ্টা কর । আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না । 
-আমার কিছু করার নেই । ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল প্রিন্স । 
-তাহলে অন্তত একবার আমার সাথে দেখা কর । শেষবারের মত । আর কোনদিন কোন অনুরোধ করব না । 
-ঠিক আছে । কালকে বিকালে দেখা করব । কিন্তু মনে রেখ এটাই শেষ । ফোন রেখে দিল প্রিন্স। 

পরদিন রাত ৮ টা : সারাদিন ক্লাসের পর বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিল প্রিন্স । ক্লাসের এক ফাঁকে সায়মার সাথে দেখা করে এসেছে । একদিনেই যেন মেয়েটার বয়স ১০ বছর বেড়ে গেছে । সারারাত কেঁদেছে বুঝাই যাচ্ছিল । প্রিন্সের হাতে একটা প্যাকেট দেয় সায়মা । 
-প্যাকেটের ভিতর কি আছে ? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে প্রিন্স । 
-রাতে খুলে দেইখো । বিষণ্ণ কণ্ঠে বলে সায়মা । 
-প্যাকেটটার কথা মনে হতেই হাত বাড়িয়ে ব্যাগের চেইন খুলে প্যাকেটটা বের করে আনল । প্যাকেটের মোড়ক খুলে বুঝতে পারলো যে এটা সায়মার ডায়েরী । অনেক অবাক হয় প্রিন্স । বিছানার কোণায় বসে একটার পর একটা পাতা উল্টাতে থাকে প্রিন্স । যতই পাতা উল্টাতে থাকলো তার শ্বাসপ্রশ্বাস ততই গভীর হতে থাকলো । ডায়েরী প্রতিটি পাতায় তার প্রতি সায়মার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে । উল্টাতে উল্টাতে শেষ পাতায় এসে পড়লো । সেখানে লেখা আছে , “ তুমি যখন ডাইরিটা পড়বে তখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে থাকবো । আর কোনদিনই তোমাকে বিরক্ত করব না । ভালো থেকো ।“ কথাটার মর্মোদ্ধার করতে কষ্ট হল না প্রিন্সের । তাড়াতাড়ি মোবাইল হাতে নিয়ে সায়মার নাম্বারে ডায়াল করলো । কিন্তু নাম্বার বন্ধ । পাগলের মত সায়মার এক বান্ধবীর মোবাইলে কল করলো । অনেকবার কল করার পর ধরল সে । কান্নাজড়িত কণ্ঠে সায়মার মৃত্যুর কথা জানাল সে । বাকরুদ্ধ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো সে । 

২ মাস পর : খুব স্মৃতিময় একটা জায়গায় বসে আছে প্রিন্স । প্রায় সময়ই এই জায়গায় এসে বসে থাকে সে । সে আর সায়মা এখানে প্রথম দেখা করেছিল । ৫ মাসের রিলেসনে মাঝে মাঝেই এখানে দেখা করতো তারা । প্রিন্স বুঝতেই পারেনি সায়মা তাকে এতটা ভালবেসেছিল । মেয়েদের প্রতি তার ঘৃণার কারনেই হয়তো তখন বুঝতে পারেনি । আর কোন মেয়ের সাথে না জড়িয়ে পুরোটা জীবন সায়মার স্মৃতি নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । সিদ্ধান্তটা কতটা বাস্তবসম্মত সেটা নিয়ে ভাবার চেষ্টা করেনি কখনও । হঠাৎ করে কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকাল । ভূত দেখার মত চমকে উঠলো সে । সায়মা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে । 
-এটা কীভাবে সম্ভব ? আমি ভুল দেখছি না তো? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো প্রিন্স । 
-না, তুমি ভুল দেখছ না । আমি মরিনি । কখনও মরার চেষ্টাও করিনি । 
-তাহলে তোমার বান্ধবী যে বলল ? 
-তাকে আমি শিখিয়ে দিয়েছিলাম কি বলতে হবে তোমাকে । মুচকি হেসে বলল সায়মা । 
-কিন্তু এইসব কেন করলে? 
-আমি যখন উল্টাপাল্টা একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নেই তখনই তোমার একটা বন্ধু কোথা থেকে জানি আমার নাম্বার জোগাড় করে আমকে ফোন দেয় । তোমার অতীত ইতিহাস সব খুলে বলে আমাকে । তুমি যে শুধু একটা মেয়েকে কষ্ট দেয়ার জন্য প্রেম কর সেটা আমি জানতে পারি । আমি তোমাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নেই । এই ২ মাস আড়ালে থেকে অন্যদের কাছ থেকে তোমার খোঁজ–খবর নিতাম । তুমি নিজেকে সংশোধন করেছ । এই কাজটা না করলে হয়তো তোমাকে কখনও এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনা যেত না । 
কোন কিছু না বলে সায়মার দিকে তাকিয়ে থাকলো সে । 
-পৃথিবীর সব মানুষ এক না । একজনের অপরাধের জন্য নিরপরাধ অন্য আরেকজনকে শাস্তি দেয়া উচিত না । হয়তো তোমার কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে অনেক মেয়েই ছেলেদের প্রতি প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে পড়েছে । তার জন্য তো তুমি দায়ী থাকবা । কোন কথা না বলে প্রিন্স সায়মার হাতে ধরল।আর কখনো এই হাত ছাড়বো না। 
-আমি তো চাই তুমি আমার হাত ধরে রাখো সারা জীবন।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...