রাত ১১ টা। যখন এই লেখাটা লেখতেছি তখন আমি ৩ তলা খাটেরর নিচতলায় শুয়ে আছি।এন্ড্রয়েড ফোন আর বাংলা টাইপ সুবিধা থাকায় আগের মত আর ডায়রীতে লিখতে হয়না ভ্রমনের গল্প।এ জন্য নিজেকে ধন্য মনে হয়।আবার মাঝে মাঝে ভাবি
আরো পরের জেনারেশনে আসলে হয়তো এভাবে টাইপ ও করতে হতো না। মনে মনে ভাবলেই লিখা হয়ে যেত।
যাই হোক আপনার যদি প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা থাকে তবে বুঝে ফেলেছেন ৩ তলা খাট কি।বাসা বাড়ীর মত ৩ তলা খাট ও হয়। ইতালির পালের্মো থেকে মিলান যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেইনের একটা কেবিনের ৩ তলা খাটের নিচতলায় শুয়ে আছি।(শুক্রবার) দুপুর ১২ টা ৫৭ মিনিটে ট্রেন ছাড়ছে । আগামীকাল সকাল ১১ টায় মিলান পৌছাবো।আবার রাত ১১ টায় আবার ট্রেইন এ উঠবো, পরের দিন (রবিবার) সকাল ১১ টায় প্যারিস নামবো। এখন কোন জায়গায় আছি জানিনা।
শুরু থেকেই বলি। বাসা থেকে ব্যাগ গুছিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে রওয়ানা দিলাম।২ জন মামা ট্রেনে তুলে দিলেন। কিভাবে টিকেট পাঞ্চ করতে হয় মামা দেখিয়ে দিলেন। ট্রেনে উঠলাম।ঠিক সময়েঈ ট্রেন ছাড়লো। মনে মনে অবাক হলাম।টিকেটে লেখা ১২ টা ৫৭। ১ মিনিটও দেরি করলো না।৩ মিনিট দেরি করে ১ টায় ছাড়তে পারতো।পরক্ষনেই মাথায় আসল, এটা তো বাংলাদেশ না।এটা ইতালি । কেবিন ৩ জনের । আমার সাথে এক ভদ্রলোক বসা। ভাবলাম অন্য কোন স্টেশন থেকে হয়তো আরেকজন উঠতে পারে।তো ভদ্রলোকের সাথে হাই হেলো করলাম।কিন্তু উনার কথাবার্তায় উনাকে বেশী সুবিদের মনে হলোনা।আর আমিও ইতালিয়ান খুব ভাল বলতে পারিনা।তাই নীরব হয়ে জানালার পাশে বসে থাকলাম।তখন ফ্রেন্ডদের খুব মনে পড়তেছিলো।এ রকম একটা লং জার্নিতে ফ্রেন্ড্ররা সাথে থাকলে সময়টা খুব ভালই কাটতো।মা বাবা,ভাইবোন, আত্বীয় স্বজন,বন্ধুবান্ধব সব ছেড়ে এই শহর থেকে সেই শহরে,এই দেশ থেকে সেই দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি।টাকার জন্য। শুধুমাত্র টাকার জন্য।এই টাকার জন্য জীবনে কত কিছু পেলাম না, কত কিছু পেয়েও হারালাম।অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন এই টাকাই নষ্ট করেছিলো। হঠাত নতুন একটা স্টেশন থেকে নতুন আর এক ভদ্রলোক উঠলেন।আমার কেবিনে ৩ জন পূর্ন হলো উনাকে একটু হাসি খুশী প্রকৃতির মনে হলো। হাই হেলো করে দু এক কথা বলে ভালোই লাগল। উনার সাথে টুকটাক কথা হচ্ছিলো।কোথায় যাচ্ছি, কি করি,দেশ কোথায় ইত্যাদি।হঠাত কোন এক কথার প্রেক্ষিতে উনাকে ইতালিয়ান ভাষায় বুঝাতে পারছিলাম না। তো আমি ইংলিশ বলে দিলাম।উনি চমকে উঠলেন। তুমি ইংলিশ ও পারো? আমি বল্লাম হ্যা পারি।আর কোন ভাষা পারো? বললাম,বাংলা,হিন্দি,ইতালিয়ান,আর এখন ফ্রান্সে যাইতেছি।ওইটাও শিখে ফেলবো। উনি বললেন,ব্রাবো ব্রাবো।তুমি ৪' ৫ টা ভাষা পারো।আর আমি শুধু ইটালিয়ান।আরো টুকিটাকি অনেক কথা হলো। উনি আমার মোটামোটি ভক্ত হয়ে গেলেন।আর আমার ও অনেক ভাল লাগল।যাই হোক উনার সাথে অন্তত মিলান পর্যন্ত গল্প করে কাটানো যাবে।আর অপর ভদ্রলোক ঘুমাইতেছেন।
হঠাত ট্রেন থামালো।সন্ধ্যা প্রায় হয়ে গেছে।উনাকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে থামালো কেন? উনি বললেন শিপে করে ট্রেইন সাগর পাড়ি দেবে।বললাম, আমি কি নেমে দেখতে পারবো?হ্যা, অবশ্যই পারবে।তবে বি কেয়ারফুল।অনেক বড় শীপ আর অনেক গুলা ট্রেইন।হারিয়ে যেও না আবার।পরে একসাথে ৩ জনই বাহির হলাম।উনি বয়ষে আমার চেয়ে অনেক বড় হলেও উনার বন্ধুসূলভ আচরন আমাকে অনেকটা মুগ্ধ করেছে। একসাথে শীপে ঘুরলাম।কফি খেলাম শীপে একটা রেস্টুরেন্টে।উনার অনেকগুলা ছবি তুললাম।আমার ও তুললেন উনি।বললেন এগুলো স্মৃতি হয়ে থাকবে। শীপ থেকে সন্ধ্যার পরের এই দৃশ্যটা সত্যি অনেক ভাল লেগেছিল।কেবিনে আসলাম।উনার ফেইসবুকে একটা প্রবলেম ছিলো ওটা নিমিষেই সমাধান করে দিলাম।উনি আরো আমার প্রশংসা করতে লাগলেন।আমার হটাত উনার ফেইসবুক ইনফোতে চোখ পড়ল।আমি অবাক।উনি ইতালীর পুলিশ।এতক্ষন উনার সাথে ছিলাম।আমি টের ও পাইনি।উনি ও বলেন নি, বুঝতেও দেন নি।আমি জিজ্ঞেস করবো কি না দ্বিধায় আছি।এমন সময় ট্রেইনের টিটির আগমন।টিকেট প্লিজ।আমার টিকেট,আর ডকুমেন্ট দেখলেন।পরে উনি টিকেট আর ডকুমেন্ট দেখালেন।উনার ডকুমেন্ট দেখে আমি শিউর হলাম উনি পুলিশ।যাই হোক পরে জিজ্ঞেস করলাম।উনি বললেন,পালের্মোতে উনি চাকরি করেন।মিলান যাচ্ছেন সামান্য কাজে।উনার ইন্টারনেট থেকে শেয়ার করে কিছু সময় ইন্টারনেট ও ব্যাবহার করলাম।এরপর সার্ভিস ম্যান আইসা বললো,আপনারা কি ঘুমাবেন?আমরা বললাম হ্যা।বললো, তাইলে খাট রেডি কইরা দেই।উনারা পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন।এই বিষয়টাতে আমি নতুন উনারা বাইরে চলে গেলেন।আর আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতে লাগলা ৩ জনের বসার সিট থেকে একটা সুইচে টিপ দিয়ে,নিচের দিকে টান দিয়ে বড় করলো।হয়ে গেলো ৩ তলা খাট।এখন উপরের ২ তলায় উনারা ২ জন নাক ডাকাইতাছেন।আর নিচে আমি কি করতেছি আপনারাই বুঝতেছেন।রাত ১২ টা।এখন একটু ঘুমাই।আর বাকি টুকু কাল লিখবো।
No comments:
Post a Comment