Monday, 14 July 2014

সুপার ন্যাচারাল মেসি! (মেসির সফলতার পেছনের অজানা যত কথা) পার্ট ২


লিও-র সুপারন্যাচারাল কথাটিও যে অতিশয় উক্তি নয়, সেটা বেলজিয়ান গোলকিপারের স্বীকারোক্তিতে পরিষ্কার। এবারের মেসি- ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, ‘মেসির খেলা এতটাই সিস্টেমের বাইরে, ও এতটাই জিনিয়াস যে, ওর খেলার ভিডিও দেখে লাভ নেই। ভিডিও দেখেও পরিষ্কার বোঝা সম্ভব নয় যে, পরের ডজটা, পরের বডি ফেইন্টটা মেসি কি করবে? সে জন্য ওর বিরুদ্ধে গোলকিপারকে প্রতিটা সেকেন্ডে একশ’ ভাগ প্রস্তুত থাকতে হয়। সম্পূর্ণ মনঃসংযোগ রাখতে হয়। গোলকিপার এক সেকেন্ডের জন্য অন্যমনস্ক হলেও মেসি গোল করে দেবে। আমি সেই এক সেকেন্ডটা আমার মধ্যে আসতে দিই না।’


 ব্রাজিলের দু’টো জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল রয়েছে। তারই একটা স্পোর্ট টিভি টু এবং তারা বিশ্বকাপ নিয়ে জমজমাট একটা শো করল। প্যানেলে অংশগ্রহণকারী চারজন বিশ্বকাপজয়ী চার সাবেক অধিনায়ক। লোথার ম্যাথেউজ, ড্যানিয়েল পাসারেল্লা, কার্লোস আলবার্তো এবং ফাবিও কানাভারো।
পাসারেল্লা আটাত্তরের সেই আর্জেন্টিনার সোনাজয়ী টিমের ক্যাপ্টেন। বললেন, ‘মারাদোনার টিমে তবু একটা বুরুচাগা ছিল, একটা ভালদানো ছিল, একটা ক্যানিজিয়া ছিল। এ তো টীমকে একা টেনে নিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এই নিয়ে চারটে ম্যাচ হয়ে গেল। ভাবাই যায় না!’ পাসারেল্লার সঙ্গে ম্যারাডোনার বহু দিনের ঝগড়া সেই আটাত্তরের দল থেকে তাকে বাদ দেয়ায়। তাই বরাবরই তার মারাদোনার আগে মেসিকে বসানো নিয়ে সূক্ষ্ সন্দেহ থাকতে পারে।

কিন্তু নব্বইয়ের মারাডোনাকে হারিয়ে যিনি ট্রফি জিতেছিলেন সেই ম্যাথেউজও একই রকম উচ্ছ্বসিত। ম্যাথেউজ শুধু মনে করেন, ‘এই ব্যক্তির দিনের পর দিন জিতিয়ে দেয়া ধারাবাহিক চলতে পারে না। কোথাও না কোথাও সিস্টেম তাকে আটকে দেবেই।’ মেসির নৈপুণ্যে তিনি একটাই তুলনা পাচ্ছেন, তিনি মারাডোনা এবং একমাত্র মারাডোনা।

কানাভারো বললেন, ‘স্টেডিয়ামে এমনি যা আলো থাকে থাকছে, তার ওপর মেসি যেন নিজস্ব আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে।’ বলেছিলেন, আর্জেন্টিনাকে ও ফাইনাল অবধি নিয়ে গেলে আমি একটুও অবাক হব না। ডাচদের হারিয়ে সেটাই ঘটেছে।অবশ্য যা-ই ঘুটক, মেসির রাজত্বটা স্বীকৃত হয়ে গিয়েছে। কানাভারো যেটা বলছিলেন সেটা অনেকেরই মনের কথা ‘বিশ্বকাপে তো পুরো ফর্মের অর্ধেক খেলাই খেলেনি। সেটা খেললে কি হবে।’

পাসারেল্লার মতে, ‘মেসি এখনকার যুগে জমি না পেয়েই এই খেলা খেলছে, ও কুড়ি-তিরিশ বছর আগে জন্মালে কি হতো!

 বিনয়ী মেসি তবু বলছেন, বিশ্বকাপের সেরা দলগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা অন্যতম নয়। স্বীকারও করলেন, ‘প্রচ- নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। শেষ দিকে যখন গোল হচ্ছে না তখন ভাবছি ম্যাচ তো টাইব্রেকারে চলে গেল। এখন কি হবে? হেরে তা হলে চলে যাব? আউটই হয়ে যাব বিশ্বকাপ থেকে? দেশে এত লোক আশা করে রয়েছে, সব শেষ হয়ে যাবে।’
সতর্ক মেসি বলেন, ‘এটা বিশ্বকাপ হচ্ছে মনে রাখবেন। অনেক আজব কিছু বিশ্বকাপে ঘটে। কারা কারা বাড়ি চলে গিয়েছে দেখুন। স্পেন, ইতালি, উরুগুয়ে, ইংল্যান্ড। এক একটা বাঘা বাঘা দল। আর অনেকে আছে যাদের কেউ ভাবেইনি যে এত দূর যেতে পারে।’ বললেন, ‘আমি জানতাম সুইস ম্যাচটা খুব কঠিন হবে। তবে এই পর্যায়ের ঠকঠকানি ধরাতে পারে ভাবিনি।’

জার্মান কোচ জোয়াকিম এবারের সর্বসেরা কোচ। তিনি বিলক্ষণ জানিবেন মেসিকে কোন রকম জায়গা দেয়া মানেই বিপদ ডেকে আনা। ম্যাচ জিততে শুধু শারীরিক শক্তি নয়, মানসিক চাপও অতিক্রম করতে হবে দুই দলকে। ম্যাচ জিততে শুধু ছক নয়। কে কতটা মানসিক চাপ সামলাতে পারে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাবে।’
এডেন হ্যাজার্ড-এর মতো তারকারা শ্রদ্ধার সঙ্গে বলেন, কিংবদন্তিদের কাছাকাছি পৌঁছতে হলে তাকে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। মেসির মতো ফুটবলারকে খুব ভাল লাগে। আজ হয়তো আমি মেসির মতো খেলছি না। কিন্তু এক দুবছরের মধ্যে আরও ভাল খেলব।
জার্মানরা বলেন, ‘আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে পরীক্ষাটা কঠিন। কিন্তু আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা রাখি। আত্মবিশ্বাসের অভাব নেই।’
দুঃখজনক হলেও সত্য, শেষ পর্যন্ত জার্মানিরা আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ২০১৪ শিরোপা নিজেদের করে নিলো। কিন্তু মেসি তো মেসিই, মেসিকে কি হারাতে পেরেছে ওরা ???

সুপার ন্যাচারাল মেসি! (মেসির সফলতার পেছনের অজানা যত কথা) পার্ট ১ ( click here )

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...