Monday, 14 July 2014

সুপার ন্যাচারাল মেসি! (মেসির সফলতার পেছনের অজানা যত কথা) পার্ট ১

লিওনেল মেসি যখন সিংহ শাবকের মতো হামাগুড়ি দিচ্ছিল, তখন গুহায় থাকতেই তাকে আবিষ্কার করেছিল কে? সেই আবিষ্কর্তা সালভেদর আপারিসিও। তবে তার উপযুক্ত ত্রাণকর্তা যিনি হয়েছিলেন, তিনি মেসির দাদি।

 তারই একটি সাক্ষাৎকার একটি আলোকচিত্রসহ পুনঃপ্রকাশ করেছে আর্জেন্টিনার একটি দৈনিক।
 আর্জেন্টিনায় সকার সমাজ ও জীবনের অংশ। মেসি একটি ফুটবল গোত্র বা ক্লাবের সদস্য। বাড়ির কাছেই গ্রান্দোলি ক্লাব। সুতরাং মেসি গোত্রের ক্ষুদে সদস্য লিও তো বলে লাথি মারবেই। ওটাই যে ওর নিয়তি। তবে ক্লাবটি কেবল শিশুদের জন্য ছিল না। সিনিয়র টিমে খেলছিলেন মেসির চাচা।

 ‘ওই ক্লাবে যোগদান সেটা আমার একার সিদ্ধান্ত ছিল না। পুরো পরিবারের সঙ্গে আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম। পরিবারের সব সদস্য তাদের বয়স ভেদে নানা টিমে খেলতেন।’ মেসি স্মৃতিচারণ করেছেন। সালটা ১৯৯১। সালভেদর বাচ্চাদের নিয়ে একদিন একটা ম্যাচ খেলাতে চাইলেন। মাঠে এলেন। বাচ্চারাও এল। দরকার ছিল সাতজনে করে ১৪ জন। কিন্তু একজনের কমতি ছিল। হঠাৎ তাঁর চোখ কাড়লো একটি বালক। একটি বল নিয়ে নিজেই নিজের সঙ্গে খেলছে। সালভেদর মেসির মায়ের সঙ্গে কথা বললেন। ওকে খেলতে দিতে অনুরোধ করলেন। মেসির মা মুখের উপরই বলে দিয়েছিলেন, না। অতটুকু বাচ্চা খেলার কি বোঝে! মেসির মায়ের আরো ভয় ছিল মেসি সবার ছোট। যদি বড়রা ওকে আঘাত দেয়। তখন কি হবে।
 সালভেদর যখন এই পয়গাম নিয়ে মেসিদের বাড়িতে যান, তখন ঘটনাচক্রে সেখানে হাজির ছিলেন মেসির দাদি। একজন ভদ্রলোককে মেসির মায়ের পত্রপাঠ বিদায়ের কথাটা তার কানে গেল। তিনি এগিয়ে এলেন। ছেলের বউকে শাসনের সুরে বললেন, তিনি চান তার নাতি যেন খেলতে পারে।
অ্যালবার্ট লিখেছেন, ২০০৮ সালে মেসি, যখন তার জীবনের প্রথম শিক্ষক সালভেদর মারা গেলেন, তখন বিলাতের ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন, ‘আমারা দাদিমা ছাড়া এত অল্প বয়সে আমি খেলার সুযোগ পেতাম না।’ আর মৃত্যুর আগে সালভেদর একটি টিভি সাক্ষাৎকার, সেখানে তিনি বলেছেন, ‘এরপর ওর জীবনে খেলা চলতে থাকল। বল ওর ওপরে এসেই পড়ল।’ এ যেন আইয়ুব বাচ্চুর গান – আমি তো প্রেমে পড়িনি। প্রেম আমার ওপরে পড়েছে।

 আলবার্তো লিখেছেন, ‘মেসির পায়ে বল এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যাতে তার প্রতিপক্ষ বুঝতেই পারে না, মেসির পায়ের বলটা কোন নিশানায় ছুটে যাবে।’ মেসির বাঁ পায়ের জাদুটাও সালভেদরের কথায় পরিষ্কার: ‘বল ওর দিকেই ছুটে যায়। আর সেটা বাঁ পায়ে হিট করে। আর তখনই তার নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়, শুরু হয় তার দৌড়। আমি দেখলাম, ড্রিবল করে সে প্রত্যেককে এড়িয়ে নিজের পথে ছুটতে পারে। আমি চিৎকার করে বলতাম, শুট কর। শুট কর। কিন্তু অত জোরে লাথি মারার জন্য তখন সে বেশি ছোট ছিল।’ সালভেদর বলে গেছেন, তার কোচ জীবনে এমন বিস্ময় আর দেখেননি। তাঁর কথায়, লিওটা সুপারন্যাচারাল।
 ২০০৭-এ গেতাফের বিরুদ্ধে পাঁচজনকে কাটিয়ে গোল করে বিশ্বফুটবলে সাড়া ফেলে দেন মেসি। কিন্তু আপারিসিও এক ঝলকেই বুঝেছিলেন, এই বাচ্চা ছেলেটাই এক দিন ছিনিয়ে নিয়ে যাবে সব দৈনিকের শিরোনাম। বিশ্ব ফুটবল এক দিন শাসন করবে।
ওই আর্জেন্টিনীয় দৈনিকে একান্ত সাক্ষাৎকারে আপারিসিও বলেছিলেন, ‘লিও ওর মা আর সঙ্গে মাঠে বসে আমার টিম গ্রান্দোলি-র অনেক ম্যাচ দেখত। তখন ও মাত্র পাঁচ বছরের বাচ্চা। এক দিন এমন হলো, আমার দলে একটা ছেলে কম পড়ছিল। বাধ্য হয়েই লিওর মা-কে বলেছিলাম, আপনার ছেলেকে খেলাতে পারব কি না। কিছুই করতে হবে না লিওকে। শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। প্রথমে লিওর মা আপত্তি করেন। কিন্তু ওর দাদিমা বলেন, ‘কোনও সমস্যা নেই। আমি লিওকে খেলাতে পারি।’
সেই ছোট্ট ঘটনাই প্রথম মেসিকে কোনও ফুটবল মাঠ চিনিয়েছিল। আপারিসিও আরও বলেছিলেন, ‘সে দিন প্রথম বলটা ধরে মেসি বুঝতে পারেনি কি করবে। আমি চিৎকার করে বলি, গোলে শট মারো। কিন্তু ও এতই ছোট ছিল যে, বুঝতে পারেনি। কিন্তু সেই প্রথম দিনই দেখেছিলাম, কিভাবে ও বল নিয়ে ওর থেকে শরীরে বড় ছেলেদের পেছনে ফেলে দৌড়ে যাচ্ছে! তখন থেকেই ওকে দলে নিয়মিত সুযোগ দিতে থাকি। সব ম্যাচে সাত-আটটা গোল করত।’

বার্সেলোনা জার্সিতে প্রথম ম্যাচ থেকেই মেসি প্রমাণ করেছিলেন, কেন বিশ্বের সেরা প্রতিভার মধ্যে তিনি স্থান পাবেন। তবে বার্সায় মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয়া খেলা দেখে মোটেই অবাক ছিলেন না তার প্রথম কোচ আপারিসিও। বলেছিলেন, ‘আমি জানতাম মেসি এমনটাই অসাধারণ খেলবে। যখন ওকে সিনিয়র লেভেলে খেলতে দেখি আমার আনন্দে কান্না পায়। আমিই প্রথম ওকে ফুটবল মাঠে নামিয়েছিলাম। ও যতই বড় হোক আমার কাছে সেই ছোট্ট লিওই থাকবে, যে বল ধরলেই মনে হতো স্পেশ্যাল কিছু করবে।’
 সেদিনের সেই ক্ষুদে লিও-র বলে লাথি মারা দেখতেই রাতের পর রাত  জেগে থাকে বাংলাদেশ, জেগে থাকে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
সুপার ন্যাচারাল মেসি! (মেসির সফলতার পেছনের অজানা যত কথা) পার্ট ২ ( click here ) 

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...