Saturday, 12 July 2014

আজমিরের এক সন্ধ্যা !!

টোকাই আজমির
একজন টোকাই। আজমির। আজমির শরীফ থেকে আজমির নামটা রেখেছিল ওর দাদী। সেও মারা গিয়েছে বহু বছর।কাঁধে একটা ময়লা ঝোলা নিয়ে হাঁটছে। সন্ধ্যা। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। বুড়ো মা বসে আছে। সারাদিনের কুরানো প্লাস্টিকের বোতল গুলো বিক্রি করে পঞ্চান্ন টাকা পেয়েছে। তাই দিকে তরকারি কিনে নিয়ে যেতে হবে। শোয়ারী ঘাটের পাশে ঝুড়িতে করে কাচা তরি-তরকারি বিক্রি করে। দেরি হয়ে গেলে ভালো তরকারি থাকবে না। শেষ হয়ে যাবে। এমনিতেই শহরের বড় বড় বাজারে সারাদিন বিক্রি করার পর যে তরকারি গুলো বিক্রি হয় না। সে গুলো চলে আসে এমন বাজারে। তরকারি ওয়ালারা সে সব নষ্ট হবার আগেই বিক্রি করে দেয় এই সব রাস্তার পাশে। কেনে আজমিরের
মতো লোকজন। কিন্তু বেলা শেষে বলে কিছু তেমন ভালো থাকে না। আর এখন কার দিনের মতো গরমের সময় তো কিছু বলার নেই। সব যেন নষ্ট হই হই করে।
রাস্তায় বাতাস। হাঁটছে আজমির। খালি বস্তাটা বাতাসে উড়ছে। সুন্দর কাপড় পড়া লোকটি আজমিরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তার গায়ে উড়ন্ত বস্তাটার একটা কোনা স্পর্শ করলো। লোকটি দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে ঘুরে লাথি মারলো আজমিরের কোমর বরাবর। লাথি দিয়েই থামলো না। চেঁচিয়ে উঠলো, ছোটলোকের বাচ্চা। দেখে চলতে পারস না? তুই আমার কাপড় নষ্ট কইরা দিছস।
লাথি হজম করে আজমির বলল, ‘কি বলেন? আপার কাপরে কোন ময়লা লাগে নাই। বস্তা তো শুকনা। ভিজা থাকলে লাগবার পারতো। আপনার কাপরে আমি তো কোন দাগ দেখবার পারতেছি না’।
‘হারামজাদা। আবার কথা কস! তোর বস্তার গন্ধ আমার কাপড় দিয়া এখন আসবো। গাল পেঁচাইয়া একটা থাপ্পড় দিমু’।
‘তাই বইলা আমারে এমনে লাথি মারবেন?’
লোকটা শোনা মাত্রই আরেকটা লাথি মাড়লো কোমর বরাবর। লিকলিকে আজমির পরে গেল রাস্তায়। পুড়ান ঢাকার গলি। আজমির আর সুন্দর কাপড় পড়া লোকটার জন্য রিক্সা যেতে পারছিল না। বেল বাজাতে লাগলো ঘন ঘন। কয়েক জন ধমকও দিল রাস্তা জ্যাম হয়ে আছে দেখে। তাদের সামনে দেখা অবিচারটা রোজকার ঘটনা। সবাই ব্যস্ত। যার যার গন্তব্যে যেতে হবে।
আজমির উঠে আর কিছু না বলে যেই দিকে যাচ্ছিল সেই দিকে হাটা দিল। সুন্দর কাপড় পরিহিত লোকটাও চলল তার নিজ গন্তব্যর দিকে।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...