Wednesday, 20 May 2015

জীবনের কঠিন ৪-৫ বছর

job
২২ থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত বয়সকে একটা গড়পড়তা ছেলের জীবনে সবচাইতে নিষ্ঠুর ক্রান্তিকাল বলা যায়।
এই সময়ে তার কাঁধে এক অদ্ভুত দায়িত্ববোধ ভর করে। মা-বাবা যে আস্তে আস্তে বৃদ্ধ হচ্ছে তা সে বুঝতে শুরু করে। মা-বাবার সাথে করা সব মান-অভিমানের জন্য অনুশোচনা একটু একটু করে খোঁচাতে থাকে।

স্নাতক পড়া অবস্থাতেই তার মাথায় ঘোরে কিছু টাকা ইনকামের চিন্তা। যত বিত্তবান
পরিবারের ছেলেই হোকনা কেন, হাতে-গোনা কয়েকজন বাদ দিয়ে ৯৫
শতাংশ ছেলেই এই বয়সে এসে বাসা থেকে ১০ টাকা খুঁজতেও সংকোচ করতে শুরু করে। আত্মীয়স্বজনেরা মুখিয়ে থাকে তার ক্যারিয়ার প্ল্যান জানার জন্য, একটু পান থেকে চুন খসলেই শুনতে হয় নিন্দুকের তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণ। যেন, এখন ভুল করাটা মহাপাপ ! তার মাথায় ঘুরতে থাকে আর ৩-৪ বছর পরের অবস্থা, কোথায় যাবে সে, কি করবে !

কারো কারো ভালবাসার মানুষের বিয়ে ঠিক হয়, তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে যায় অনেক সাজানো স্বপ্ন। উদ্বাস্তু হয়ে কেউ কেউ আনমনে হাঁটতে থাকে ফুটপাথ ছেড়ে। বন্ধুর কেনা দামি হ্যান্ডসেট দেখে মুখে মলিন হাসি দিলেও মাথায় ঘোরে একগাদা দায় মেটানোর তৃষ্ণা। ছোট্ট ঢোক গিলে তৃষ্ণার্ত কাকের মতো সব লোভ লুকিয়ে রাখার একগুঁয়ে চেষ্টা করে যায় ছেলেটা। মাসের শেষে খালি পকেট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় যাযাবরের মতো, দুনিয়াটাকে বড় বিষণ্ণ লাগে, জীবনসংগ্রামের দুয়ারে দাঁড়িয়ে সে দেখতে পায়-জীবনটা আসলে পুস্পসজ্জা তহ দূরে থাক, ছোট কাঁটাও নয় ঠিক, যেন একগাদা ইয়া বড় বড় গজাল পোঁতা শক্ত বিছানা। কাউকে কিছু বলাও যায়না, কেউ বুঝেওনা। যে পার করে গেছে সময়টা, সেও "ঠিক হয়ে যাবে" টাইপের বুলি আওড়ে পালিয়ে বাঁচতে চায়।

স্বার্থপরতার সংজ্ঞাটা হঠাৎ করেই বদলে যায়। বয়সটা আসলেই নির্মম...শুধু একটা ছেলেই জানে সে কিভাবে পার করে সময়টা। ১০ বছর পড়ে গিয়েও পিছনে তাকালে সবার আগে এই সময়টাই মনে পড়বে। কেউ হয়তো মুচকি হাঁসি দিয়ে বলবে-"আমি পেরেছি"। কেউ হয়তো বলবে-"মনে করতে চাইনা", কেউবা অনেক কিছু হারিয়ে একাকীত্বকে সঙ্গী করে মলিন হাসি দিয়ে সামনে তাকাবে, আর ভাববে- "এটাই হয়তো জীবন! এটাই হয়তো সংগ্রাম !".

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...