যারা পার্ট ১ পড়েন নি তারা অবশ্যই পার্ট ১ পড়ে আসুন।
মেসির মূল্য উঠেছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা!
ইউরোপিয়ান ফুটবলের দলবদলের বাজারে অর্থের ছড়াছড়ি। লাখ-কোটি ছাড়িয়ে এখন সেটা মিলিয়ন-বিলিয়নে রূপ পাচ্ছে।দলবদলের বাজারে ফুটবলারদের এত এত মূল্য! আচ্ছা যদি লিওনেল মেসিকে বিক্রি করা হতো কিংবা কেউ কিনতে পারত, তাহলে কত মূল্যে বিকোতেন তিনি? সে চেষ্টা যে একেবারেই হয়নি তা নয়, এ মৌসুমেই মেসিকে কিনতে উঠেপড়ে লেগেছিল জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ক্লাব চেলসি।
সম্প্রতি গোপন এ খবর ফাঁস করে দিয়েছে স্প্যানিশ দৈনিক মুন্ডো দেপোর্তিভো।আরেক স্প্যানিশ দৈনিক পান্টা পেলোতার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য ফাঁস করেন ফিফার এজেন্ট এবং পেশাদার জার্সি ডিজাইনার ফ্রাঙ্কোইস গ্যালার্ডো। পান্টা পেলোতাকে তিনি বলেন,
'বায়ার্ন মিউনিখ মেসিকে কেনার জন্য ২৫০ মিলিয়ন ইউরোর (আড়াই হাজার কোটি টাকা) প্রস্তাব দিয়েছিল। একই প্রস্তাব নিয়ে প্রস্তুত ছিল চেলসিও। ফ্রাঙ্কোইস নিজে এবং খেলার সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস এ প্রস্তাবের মধ্যস্থতা করেছিল। এমনকি যে ক্লাব মেসিকে কিনতে পারবে তাদের অর্ধেক (১২৫ মিলিয়ন ইউরো) সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছিল অ্যাডিডাস। তবে শেষ পর্যন্ত মেসিকে কেনার জন্য বায়ার্ন কিংবা চেলসির এ চেষ্টা সফল হয়নি।' ফ্রাঙ্কোইস জানান, মেসিকে কেনার জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিল বায়ার্ন মিউনিখ। বার্সার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলার কারণেই মেসিকে কেনার জন্য ক্লাবটির এত বেশি আগ্রহী হওয়া।কিন্তু কাউকেই সুযোগ দেন নি মেসি। কৃতজ্ঞতা বলে একটা কথা আছে না। যে বার্সেলোনা তার জন্য এত করলো তাদের ছেড়ে কি করে চলে যাবেন মেসি। তিনি বলেন,
"বার্সেলোনা আমার জীবন, তারাই আমাকে আজকের লিওনেল মেসি বানিয়েছে, আমি তাদের
ছাড়তে পারি না এবং আমি কখনোই বার্সাকে ছাড়তেও চাই না, বার্সেলোনা সব সময়ই আমার
হৃদয়ের মধ্যে আছে এবং থাকবে"। আমি নিজ ইচ্ছায় কখনো বার্সা ছাড়বো না, ওরা যদি আমাকে চলে যেতে বলে তবেই আমি চলে যাবো।
ছাড়তে পারি না এবং আমি কখনোই বার্সাকে ছাড়তেও চাই না, বার্সেলোনা সব সময়ই আমার
হৃদয়ের মধ্যে আছে এবং থাকবে"। আমি নিজ ইচ্ছায় কখনো বার্সা ছাড়বো না, ওরা যদি আমাকে চলে যেতে বলে তবেই আমি চলে যাবো।
মেসির যত অর্জনঃ
✈ বার্সেলোনার হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫৪ গোল
করেছেন মেসি।
✈বার্সেলোনাকে জিতিয়েছেন ২১টি শিরোপা।
✈ বার্সেলোনাকে এক বছরের যতগুলো সম্ভব
(৬টি) শিরোপা জিতিয়েছেন।
✈ ২৫ বছর বয়সে তিনি লা-লিগায় সর্বকনিষ্ঠ
খেলোয়াড় হিসেবে ২০০ গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
✈ চ্যাম্পিয়নস লিগের এখন পর্যন্ত তিনি
তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। তার
গোল ৮৬ ম্যাচে ৬৭টি। সামনে আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ৬৮ (১০৭) এবং রাউল গঞ্জালেস ৭১ (১৪২)।
✈ স্পেনিশ লা লিগায় তার গোল ২৪৩টি। ২৫১ গোল নিয়ে সামনে রয়েছে শুধু স্পেনিশ
তেলমো জারা।
✈ টানা ৪টি ব্যালন ডি’অর
জিতে গড়েছেন ইতিহাস। আর কেউ টানা
পারবেন কি-না সন্দেহ রয়েছে যতেস্ট।
✈ অলিম্পিক গোল্ড মেডেল ও অনুর্ধ্ব-২০
বিশ্বকাপ শিরোপা।
✈ দেশের জার্সি গায়ে ৩৮ গোল নিয়ে
বাতিস্তুতার পর তিনিই এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা।
✈ এক বছরে সব থেকে বেশী গোলদাতা মেসি-ই। ৯১ টি।
✈ সর্বোচ্চ ৪ টি হ্যাট্রিকেরও রেকর্ড
রয়েছে মেসির।
✈ চ্যাম্পিয়নস লীগে বেয়ার লেভারকুজেনের
বিপক্ষে খেলায় পাঁচ গোল করে মেসি ইতিহাস গড়েন মেসি।
✈ চ্যাম্পিয়নস লীগের এক মৌসুমে হোসে
আলতাফিনির করা ১৪ গোলের রেকর্ডও স্পর্শ করেন মেসি।
✈ ২০১১–১২ মৌসুমে সব
ধরণের প্রতিযোগিতায় ৭৩টি গোল করার মাধ্যমে ইউরোপীয় ফুটবলে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ
গোল করার রেকর্ড গড়েন মেসি।
✈ লা লিগায় ৫০ গোল করার মাধ্যমে লা লিগার
এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও গড়েন তিনি।
✈ মেসি ফুটবল ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড়
যিনি একই মৌসুমে ছয়টি আলাদা অফিসিয়াল প্রতিযোগিতায় গোল এবং গোলে সহায়তা উভয়ই
করেছেন।
✈ লা লিগায় টানা ১৯টি খেলায় গোল করার
কৃতিত্ব অর্জন করেন মেসি।
✈ ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লীগের
সব কয়টি দলের বিপক্ষে টানা গোল করার রেকর্ড গড়েন তিনি।
✈ ২০০৫ ফিফা অনুর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ এ
তিনি
সর্বোচ্চ ছয়টি গোল করেন এবং সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
এবং আর্জেন্টিনা শিরোপা জেতে।
✈ ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে কোপা আমেরিকায়
আর্জেন্টিনা রানার-আপ হয় এবং তিনি প্রতিযোগিতার কনিষ্ঠ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত
হন।
আরো কত অর্জন, যা হয়তো আমি কালেক্ট করতে পারিনি। লিখে শেষ করা যাবেনা এই কিংবদন্তীর অর্জন নিয়ে। তিনি-ই
মেসি।একসঙ্গে এতো কীর্তি আর কোনো ফুটবলারই করে দেখাতে পারেননি। একজনই
পেরেছেন তিনি লিওনেল মেসি।বিশ্বের তাবৎ ফুটবল বোদ্ধা ও লিজেন্ডদের কাছে তিনি সেরাদের সেরা। তবুও কেউ কেউ তাকে সেরাদের সেরা মানতে নারাজ। তাদের যুক্তি মেসির পায়ে সব সাফল্য গড়াগড়ি খেলেও তিনি পেলে-ম্যারাডোনার মতো বিশ্বকাপ ট্রফি বগলদাবা করতে পারেননি।
এতো অর্জনও তার শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি বলেই হয়তবা মেসি পণ করেছিলেন শ্রেষ্ঠত্বের শেষ সীমা দেখবেন, দেখাবেন তিনি। অন্তত একবার হলেও সোনালি ট্রফিটা উচু করে গগণপানে তাকিয়ে অন্তযার্মীকে বলবেন, আমিই সেরা।
ওই ট্রফির আলোকচ্ছটার মতো তার সাফল্যে ছড়িয়ে যাবে বিশ্বময়। ফুটবলের শুরু থেকে অন্তত পর্যন্ত। তার নামে লেখা হবে শ্রেষ্ঠত্বের বিজয়গাঁথা।
আকাশি-সাদা জার্সি গায়েও মেসিকে খুঁজে পাওয়া যায়না বলে নিত্য দুয়ো দেওয়া হতো। অথচ ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সর্বোচ্চ ১০ গোল করে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে সর্বাগ্রে দলকে বিশ্বকাপের টিকেট এনে দেন মেসি।
দেশের জার্সি গায়ে ৩৮ গোল নিয়ে বাতিস্তুতার পর তিনিই এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা। অথচ তার সুযোগ ছিল স্পেনের হয়ে খেলার।তারুণ্যে যখন তার প্রতিভার পূর্ণ স্ফূরণ শুরু হয় তখন ডাক পেয়েছিলেন স্পেন দলের হয়ে খেলার। তাহলে হয়তো আরো বছর চারেক আগেই মীমাংসা করতে পারতেন শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্কের। ছুয়ে দেখা হতো সোনালি ট্রফিও। কিন্তু শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য ও যৌবন স্পেনের কাতালানে কাটিয়ে দিলেও বুকের অন্তঃস্থলে আকাশি-সাদা পতাকাকেই আগলে রেখেছিলেন মেসি।
নাহ, পারলেন না মেসি। পারলেন না বিশ্বকাপটা ছুঁয়ে দেখতে। চরম আরাধ্য এই ট্রফিটাই তাকে নিয়ে সব বিতর্কের অবসান করে দিতে পারতো। কিন্তু, না। তার ভাগ্যে এই ট্রফিটা রাখেননি সৃষ্টিকর্তা। তাই যদি না হবে যে সব সুযোগে ভুরিভুরি গোল করেছেন তিনি। ২০১৪ ফাইনালে কেনো সেই সুযোগে পারবেন না মেসি?
নিজের জার্সি ছাড়া বিশেষ করে আর্জেন্টিনা যখন নীল জার্সি পড়ে খেলতে নামে তখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। অনেকেই বলেন, এটা নাকি এক অভিশপ্ত জার্সি। ’৯০ বিশ্বকাপেও জার্মানির কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা একই জার্সি পরে। সেই দৃশ্য এখনও চোখে ভাসে। যা-ই হোক জার্মানরা লড়াকু জাতি। রক্ত দেখলে ওরা সিংহের মতো গর্জে ওঠে। সোয়েনস্টাইগারের রক্ত বৃথা যেতে দেয়নি তারা। ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে দেখে কোচ জোয়াকিম লো ‘বেঞ্চ মেটদের’ বলেছিলেন, এর জবাব দেবো আমরা অন্যভাবে। ঠিকই দিয়েছেন। এই জবাব জার্মানির জন্য দ্যুতিময়। আর মেসির জন্য মর্মবেদনা- যা থেকে মেসি কখনও বের হতে পারবেন না। তাকে তাড়া করে বেড়াবে সারাজীবন।
মেসি পারলেন না! কেনো পারলেন না? ভালো বলতে পারবেন সৃষ্টিকর্তা!
No comments:
Post a Comment