Saturday, 19 July 2014

আমরা কি পারি আমাদের প্রানবন্ত বাবাকে সন্তুষ্ট করতে?

রাহাতের সাথে আমার পরিচয়টা ভার্সিটির প্রথম ক্লাশে। আস্তে আস্তে কাছে আশা। অতঃপর আপন করে নেওয়া। ছেলেটা বেশ চাপা স্বভাবের।
প্রথম দুই বছর রমযান মাসে বাড়ীতেই ছিলাম। গতবছর প্রয়োজনেই মেসে থাকতে হলো। একুশতম রমযানে রাহাত অনুরোধ করল ওর বাবার জন্য শপিং করবে আমি যেন সাথে থাকি।
শপিং মলে ঢুকলাম। ভালো মানের বেশ কিছু পান্জাবী
আর লুঙ্গি কিনলো। অবাক হলাম এতোগুলো পোশাক দিয়ে কি করবে সে।। রাহাতকে প্রশ্ন করলে তার জবাব ছিল ""বাবার জন্যইতো দোস্ত। কিপটামি করবো কেন বল?"" কিছুই বললাম না। শপিং থেকে বের হলাম।।
রেল লাইন দিয়ে হাঁটছি। সামনে বেশ নোংরা একটা পরিবেশ। কাছে যেতেই বুঝলাম এটা একটা বস্তি এলাকা। রাহাত সেখানে থামলো।আমি তার সাথেই। দুজনের হাতেই অনেকগুলো শপিং ব্যাগ। এরপর যা দেখলাম তা সত্যিই অবাক করার মত।
বস্তি র শিশু বৃদ্ধ সবাই রাহাতকে আঁকড়ে ধরলো। কেউ কেউ রাহাতকে ধরে কাঁদছে। কেউবা উচ্ছাসে ফেটে পড়ছে। দেখলাম রাহাত ওদের হাতেই সমস্ত লুঙ্গি আর পান্জাবীগুলো তুলে দিচ্ছে। আমিও সাহায্য করলাম। দুজন বৃদ্ধ রাহাতকে আঁকড়ে ধরে কাঁদছে। সেদিনই প্রথম দেখলাম রাহাত কাঁদছে।বুঝলাম রাহাতের জন্য জায়গাটা নতুন না। অতঃপর প্রস্থান করলাম।
রাহাতকে বললাম
-- কিরে তোর আব্বুরটাও যে রাখলি না।
গম্ভীর কন্ঠে
- যাদের দিয়েছি এরা সবাই আমার বাবাই। বাবার বয়সিইতো।
-- তাহলে আংকেল?
রাহাত কান্না জড়িত কন্ঠ বলে
- বাবাকে দেখার সে ভাগ্য আমার হয়নিরে। আমার যে বাবা নেই। আর তাই বাবার বয়সি কাউকে দেখলেই আমি বিনম্র শ্রদ্ধায় অবনত হই। প্রতি ঈদেই গরিব দুখীর মাঝে বস্ত্র আর অর্থ বিতরন করি বাবার মঙ্গল কামনায়। এটাই যে আমার পরম শান্তি।।
কাঁদছি দুজনই। ভাবছি মৃত বাবার প্রতি রাহাতের ভালোবাসার কথা। আমরা কি পারি আমাদের প্রানবন্ত বাবাকে সন্তুষ্ট করতে?! আল্লাহ আমাদের মনে রহমত দান করুন। আমীন।

----Mostafa Kamal Riad

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...