Wednesday, 2 October 2013

ভালবাসার একটি গল্প

আলভী খুব অবাক হয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো। প্রায় ৬ মাস পর উর্মির নাম্বার থেকে কল। মোবাইলের স্ক্রীনে খুব সুন্দর করে লেখা- SHE calling...

৬ মাস আগে আলভীর সাথে উর্মির ব্রেক আপ হয়ে যায়। সব ঠিকঠাক, হঠাৎ একদিন উর্মি জানালো, "আমি রিলেশনটা কনটিনিউ করতে পারবো না। আমি সিরিয়াস।"
আলভী আধো বিশ্বাস আধো অবিশ্বাসে দুলতে দুলতে বললো, "কেনো? কী হইছে?"
উর্মি খুব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলো, "আমার আরো একটা রিলেশন আছে। আমি সেটাই কনটিনিউ করতে চাই।"
বিশ্বাস করতে পারছিলো না আলভী। বললো, "আরে ধুর, ফাইজলামি করো ক্যান!"
ফোন কেটে দেয় উর্মি। এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি তার সাথে। সপ্তাহ দুয়েক পর আলভী খবর পেয়েছিলো, উর্মি ফ্যামিলির সাথে কানাডা চলে গিয়েছে।
এ পর্যন্তই। উর্মি নামটা আলভীর প্রতি রাতের চোখের জলে আর ফোনবুকের 'SHE' নামের আড়ালেই রয়ে গেলো।

এমন অদ্ভুত অপ্রত্যাশিত ব্রেক আপের পর আজ আবার উর্মির কল। আলভী বুঝে উঠতে পারে না কী করবে। শেষমেষ কলটা রিসিভ করলো।

যতটা না অভিমান কিংবা কষ্ট, তার চেয়েও বেশি কৌতুহল ভরা কন্ঠে বললো,
-হ্যালো?
=কেমন আছো?
উর্মির কন্ঠটা আগের মত আর বাচ্চা বাচ্চা নেই। নারীত্বের ছাপ স্পষ্ট।
-বেঁচে আছি। কানাডা থেকে ফিরেছো কবে?
=গতকাল। আলভী আমি খুব সরি...
-বাদ দাও। তারপর কেমন আছো? খুব সুখেই আছো নিশ্চয়?
=আমি রিয়েলি অনেক সরি। প্লিজ..
-বিএফ কেমন আছে?
=আলভী প্লিজ... আমাকে মাফ করে দাও...
-বিয়ে করে ফেলেছো? বাচ্চা কাচ্চা?
=স্টপ! স্টপ ইট!
ওপাশ থেকে চিৎকার করে ওঠে উর্মি। সেই সাথে শোনা গেলো কান্নার আওয়াজ...

প্রতিহিংসা কমিয়ে আলভী শান্তভাবে বললো,
"এমন করলা কেন আমার সাথে?"

উর্মি কাঁদতে কাঁদতে অনেক কথা বললো। কথাগুলোর সারমর্ম করলে যা দাড়ায়, তা হচ্ছে- অন্য কোনো ছেলের সাথে উর্মির রিলেশন ছিলো না। উর্মির বাবা একপ্রকার জোর করেই সবাইকে নিয়ে কানাডা যাবার ব্যবস্থা করে ফেলেন। আর ফেরা হবে না, ওখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু হবে, এমনটাই পরিকল্পনা ছিলো। তাই আলভীর সাথে উর্মির সম্পর্কটার আর কোনো ভবিষ্যত নেই এটা বুঝতে পেরেছিলো বলেই ঐ নির্মম নাটকটা করতে হয় তাকে।

সব শুনে আলভী বললো, "দেশে ফিরেছো কেন তাহলে?"
=বাবা মারা গেছে...

অভিমানী প্রেমিকের সব দম্ভ নিমেষেই চুরমার হয়ে গেল। আলভী শুধু বললো, "তুমি কোথায় এখন? দেখা করো প্লিজ... এই মুহুর্তে..."

রেস্টুরেন্টে টেবিলের ওপাশে বসা মেয়েটা বড্ড অচেনা লাগছে। ঠোট থেকে মুছে গেছে সব স্পর্শের ছাপ। আলভী সাবেক প্রেমিকার দিকে তাকিয়ে বললো,
-তারপর এখন ফিউচার প্লান কী?
=জানি না।
-বিয়ে শাদী করে ফেলো একটা।
=হুম।
-তুমি আমাকে নিয়ে আবার কোনো স্বপ্ন দেখছো না তো?
উর্মি খুব অসহায়ের মত আলভীর দিকে তাকালো। আলভী বুঝতে পেরে বললো,
-কি অদ্ভুত। আমার কোনো লাইফ নেই? তুমি কি ভেবেছো সারাজীবন ওয়েট করবো তোমার জন্য?
=ওও। আমি সরি।
উঠে দাড়ালো উর্মি। চোখে জল টলমল করছে। ঘুরে দরজার দিকে পা বাড়ালো। মেয়েরা এভাবেই কান্না লুকোয়। যার জন্য কান্না, তাকে দেখায় না, কিন্তু পৃথিবীবাসীকে দেখায়। চোখের জলের কি মায়াবী অপচয়!

পেছন থেকে উর্মির হাতটা টেনে ধরলো আলভী। হাসিমুখে বললো, "এই রেস্টুরেন্টের রাইসে লবন অনেক কম। দেখি, কয়েক ফোটা চোখের পানি দিয়ে যাও। চোখের পানি লবনাক্ত।"
উর্মি কেঁদে ফেললো। আলভী আবার বললো, "এত কাঁদো ক্যান? অবশ্য ভালোই হইছে। আমাদের সংসারে লবন কিনতে হবে না। তোমার চোখের পানিতেই রান্না হয়ে যাবে। ইউ নো, চোখের পানি লবনাক্ত!"
উর্মির কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল।,

FB

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...